ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

প্রসূতি সেবায় আস্থার প্রতীক ওজিএসবি হাসপাতাল  

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৩৭, ২০ মে ২০১৮

চারদিকে সুনসান নীরবতা! ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো না তেমন কাউকে। হাসপাতাল যেখানে লোকে-লোকারণ্য থাকার কথা তা থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড  গাইনোকলিজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ  (ওজিএসবি) হাসপাতাল। দেখে মনে হবে এটি কোনো সংরক্ষিত এলাকা। ভেতরে প্রবেশ করার পরে দেখা গেলো দু’একজনের আনাগোনা। অন্য সব হাসপাতাল থেকে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন  

অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকলিজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ(ওজিএসবি) বাংলাদেশের সবে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ এক হাজার ৬০০ সদস্যদের সমন্নয়ে গঠিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে এই সোসাইটি মহিলা, গর্ভবতী মা, কিশোরী ও নবজাত শিশুদের স্বাস্থ্য পরিচর্যাসহ পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক কার্যক্রম লিরলসভাবে পরিচালনা করে আসছে। দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানউন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। সারাদেশে এই হাসপাতালটির ১৩টি শাখা রয়েছে।

ওজিএসবি একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘভুক্ত বিভিন্ন সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী ও দেশি-বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগের মাধ্যমে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছে।

মিরপুর-১৩ তে এক একর জায়গার ওপর হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালে। এখানে নরমাল ডেলিভারি (স্বাভাবিক প্রসব), সিজারিয়ান ডেলিভারিসহ সব ধরনের গাইনোকোলজিক্যাল অস্ত্রোপচার করা হয় নামমাত্র মূল্যে। তবে অসহায় ও অসচ্ছল প্রসূতিদের সেবা দেওয়া হয় বিনামূল্যে।

হাসপাতালের মূল উদ্দেশ্য হলো জরুরি প্রসূতিসেবা ও নিরাপদ সন্তান প্রসব সেবা প্রদানের লক্ষে নিরাপদ মাতৃত্ব ও শিশু মৃত্যুহার কমানো। হাসপাতালটি মহিলা ও শিশুদের স্বল্প খরচে করছে সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকে। এছাড়া মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রোগী দেখা হয়।

নারী গার্মেন্টস শ্রমিক সুরাইয়া বেগম। এপারেল এইড গার্মেন্টসে কোয়ালিটি সেকশনে কাজ করে। বেতন যা পায় তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চালাতে হয় তাকে। গর্ভবতী সুরাইয়াকে নিয়ে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরলেন তার স্বামী ইসমাইল। বিভিন্ন হাসপাতাল  ঘুরে দেখলেন স্বাভাবিক প্রসবে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো লাগবে। পরে খবর পেয়ে যান মিরপুর-১৩, ওজিএসবি হাসপাতালে। গত ২৭ মার্চ ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় সুরাইয়া। পারিবারিক অসচ্ছল বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওষুধের দাম ছাড়া বাড়তি কোনো টাকা রাখেনি। 

ইসমাইল জানাই, ‘অসুস্থ সুরাইয়া কে নিয়ে আমি খুবই চিন্তায় ছিলাম। টাকার জোড় না থাকায় তেমন ভালো কোনো হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারিনি। আমার এক আত্মীয়ের কাছে জানতে পারি যে গর্ভবতী নারীদের বিনামূল্যে ডেলিভারি করা হয়। তাই এখানে আসা। এই হাসপাতাল আমাদের মত গরিবদের বিপদের বন্ধু।’

এটি বেসরকারি হাসপাতাল হলেও মিরপুর ও আশপাশের এলাকার প্রসূতি নারীদের জন্য  এক আস্থার জায়গা। পাশাপাশি কিশোরী, নবজাতকদের স্বাস্থ্যসেবা, গাইনি অস্ত্রোপচার, নারীদের জরায়ু ক্যানসারসহ বিনা মূল্যে বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

ওজিএসবি হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সিরাজুল করিম বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো সেবার পাশাপাশি মুনাফা করে থাকে কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। অনেকে না জানার কারণে এখানে  আসে না। সেবা দেওয়ার লক্ষে মূলত এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মাতৃমৃত্যু রোধ করা আমাদের লক্ষ্য। 

হাসপাতালটি পরিচালনা করে ওজিএসবি সমিতি। ১৯৭২ সালে প্রজননস্বাস্থ্য খাতে সেবা দিতে এই সমিতির প্রতিষ্ঠা। ১৯৯৫ সালে এই সমিতি মিরপুর-১-এ প্রথম হাসপাতাল করে। সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষকে অল্প পয়সায় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। সমিতির সদস্যরা ভাবলেন বড় আকারে একটা হাসপাতাল করার। সদস্যদের অনুদানের ৬ কোটি এবং সরকারের পক্ষ থেকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে শুরু হয় ওজিএসবি হাসপাতালের কার্যক্রম। ২০১১ সাল থেকে চিকিৎসাসেবা শুরু হয়। পাঁচতলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে ১৫০ শয্যা আছে।

বিনা মূল্যে সেবা

মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালে বিনামূল্যে রোগী দেখা হয়। আর প্রতি বৃহস্পতিবার নারীদের স্তন ক্যানসার শনাক্তের পরীক্ষা, জরায়ুমুখে ক্যানসারের কলোকোসকপি পরীক্ষা, ভিআইএ, প্যাপস পরীক্ষাও বিনামূল্যে করানো হয়।

কেআই/ এসএইচ/ 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি